বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বান্দরবান-থানছি সড়কে পাহাড় চূড়ায় নীলগিরি অবস্থিত। সমুদ্র থেকে প্রায় ২ হাজার ২০০ ফুট উচ্চতায় এই পর্যটন কেন্দ্রটি অবস্থিত। এই স্থান থেকে পর্যটকরা সহজেই মেঘ ছুঁতে পারেন বলে একে বাংলাদেশের দার্জিলিংও বলা হয়। নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে যে দিকে চোখ যায় শুধুই সবুজ আর সবুজ। চারপাশে সবুজের সমারোহ আর নির্জন প্রকৃতি নীলগিরির অন্যতম আকর্ষণ ও দিক।
দিনের বেলায় এই স্থান থেকে বঙ্গোপসাগর ও জাহাজ চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়। যা পর্যটকদের খুব আকৃষ্ট করে। এছাড়া ছোট ছোট পাহাড় ঘেষে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদীর আকাবাকা দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য সকলকে আকর্ষণ করে। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই নীলিগিরি রিসোর্টে অবস্থান ও রাত্রিযাপনের জন্য সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেড হেডকোয়াটার এর সাথে আগাম যোগাযোগ করতে হয়। প্রকৃতির অপরুপ মুগ্ধকর নয়নাভিরাম এই দৃশ্যগুলো পর্যটকদের অনেক আকৃষ্ট করে।
মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা পূরণ করতে চাইলে যেতে হবে নীলগিরি। নীলগিরি পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে মেঘ নিজে এসে ধরা দেবে আপনার হাতে। মাথার উপর নীল আকাশে সাদা মেঘ খেলা করে নীলগিরি পাহাড়ে। সৌন্দর্য্যের এক নীলাভূমি এই নীলগিরি। নীলগিরির সৌন্দর্যের কারণে বান্দরবানকে বাংলাদেশের দার্জিলিং বলা হয়। শীতকালে এবং বর্ষাকালে এইখানে ভ্রমণে অনেক বেশি আনন্দ। তবে বর্ষাকালে ভ্রমণে গেলে বেশি আন্দন পাওয়া যায়। কারণ এই সময়ে মেঘের অপরূপ নৃত্য দেখতে দেখতেই দিন চোলে যায়।
দুর্গম পাহাড়ে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়েছে মেঘদূত, নীলাতানা নামে পর্যটকদের জন্য সকল সুবিধায় তিনটি কটেজ। কটেজগুলো রাত্রি যাপনের জন্য ভাড়া পাওয়া যায় ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০টাকার মধ্যে। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক একটি রেস্টুরেন্টও। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে নীলগিরিতে পৌঁছেই রেস্টুরেন্টে পেট ভোরে খাওয়া যায়।
নীলগিরি যেন প্রকৃতির এক অনন্য দান। নীলগিরির চূড়া থেকে দেশের ২য় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং, প্রাকৃতিক আশ্চর্য বগালেক, কক্সবাজারের সমুদ্র, চট্টগ্রাম সমদ্র বন্দরের আলো-আঁধারি বাতি এবং চোখ জুড়ানো পাহাড়ের সারিও দেখতে পাওয়া যায়।
নীলগিরির কাছাকাছি রয়েছে কয়েকটি ম্রো উপজাতীয় গ্রাম। নীলগিরির একদম কাছে কাপ্রু পাড়া, আপনি সহজেই ম্রো আদিবাসী সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই নীলগিরিতে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। ফলে এই জায়গায় নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই। আপনার যে কোন প্রয়োজনে সেনা সদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
নীলগিরি রাতের সৌন্দর্য:
নীলগিরির রাতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরো হতবাক করে। চারিদিকের হরিণ, শিয়ালসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর ডাক আর পাহাড়গুলোর আলো-আঁধারির দেখে আপনার জীবনকেই যেন রহস্যময় বলে মনে হবে।
যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন তাদের জন্য রাতের নীলগিরি হতে পারে উপযুক্ত স্থান। নীলগিরি যাওয়ার পথে আপনি দেখে যেতে পারেন বান্দরবানের সৌন্দর্যময় শৈলপ্রপাত। এখানে আদিবাসী বম তরুণীরা আপনাকে স্বাগত জানাবে। এখান থেকে কিনে নিতে পারেন আদিবাসীদের হাতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য। এর পরই চোখে পড়বে স্বপ্নচূড়া। স্বপ্নচূড়া থেকেও বান্দরবানের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাই।
থাকার জায়গা :
বান্দরবানে অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল, মোটল রয়েছে। যেখানে ৬শত থেকে ৩ হাজার টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন। যেগুলোতে থেকে ভাড়ায় এবং নিজস্ব গাড়িতে করে সপরিবারে নীলগিরি ঘুরে আসতে পারবেন।এছাড়াও নীলগিরি রিসোর্টে থাকা-খাওয়ার সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনী অফিসার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার রেফারেন্স লাগবে। অন্যান্যগুলো হচ্ছে- মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স।
এর বিপরীত পাশে ছোট্ট পাহাড়ের চূড়ায় হলিডে ইন রিসোর্ট। এখানে ছোট খাটো অনেকগুলো কটেজ রয়েছে। বান্দরবান শহরে অবস্থিত ফোরস্টার হোটল। এখানে এসি এবং নন-এসি সব রকমের রুম রয়েছে।
হোটেলের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে টিভি। বান্দরবান পৌর শহরে অবস্থিত থ্রি স্টার হোটেল। এখানে সপরিবারে রাত্রি যাপনের সু-ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এখানে ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া হয়। প্রতিটি ফ্ল্যাটে ৮ থেকে ১৫ জন পর্যন্ত থাকার সুযোগ রয়েছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা আছে এখানে।