আপনি কি লেখার প্রতি আগ্রহী? আপনি কি ভালো লিখতে পারেন?? যদি প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে আপনি নিজের লেখার সক্ষমতাকে ইনকামের উৎস হিসেবে পরিণত করতে পারেন। আর সেটা হলো ব্লগে কন্টেন্ট লেখা।
কয়েকবছর আগেও ব্লগিংকে শুধুমাত্র শখ হিসেবে নেয়া হতো। কোনো ইনকাম হতো না। কিন্তুু বর্তমানে ব্লগিংকে অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এরই কারণে অনেক ব্লগারের পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও ব্লগিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।
ব্লগ থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য প্রথমেই একটি ব্লগ তৈরি করতে হবে। ব্লগিংয়ের জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, দক্ষতা এবং যথাযথভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ।
➡পরিকল্পনা গ্রহণ:
আপনি যদি ব্লগ থেকে টাকা আয় করতে চান তাহলে এটিকে পেশা হিসাবেই গণ্য করতে হবে। ব্লগিংকে যদি পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে চান তাহলে নিজের লক্ষ আর ব্যবসার পরিকল্পনার উপর নির্ভর করে কিছু অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে কাজ শুরু করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এরপর আপনি কতটা সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন তা স্থির করুন।
ব্লগ তৈরি করতে অনেক বেশি প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন হয়না। কীভাবে আপনি অর্থ উপার্জনের জন্য ব্লগ তৈরি করবেন এই পোস্টে আমি সে বিষয়ে আলোচনা করবো ইনসাআাল্ললাহ।
➡️লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি:
আপনার লেখার মান উন্নয়নের সর্বোত্তম উপায় হল পড়া। আপনি যত বেশি অনুশীলন করবেন তত বেশি আপনার জ্ঞান বাড়বে। অবশ্যই আপনি যে বিষয়ে লিখতে চান সে বিচার সম্পর্কে ভালোভাবে পড়ে জেনে নিবেন।
এছাড়াও অনলাইন/অফলাইনে টাকা দিয়ে বা বিনামূল্যে বিভিন্ন কোর্সগুলো করতে পারেন, যেখানে শিক্ষকরা সৃজনশীল লেখার বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। নিজের ব্যবসায়িক ব্লগে আপনি চাইলে মানসম্পন্ন লেখক নিয়োগ দিতে পারেন, যারা প্রয়োজন অনুসারে আপনার ব্লগে লিখবেন।
➡️ব্লগ তৈরিঃ
প্রোগ্রামিং জ্ঞান না থাকা বা টাকা খরচ না করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনি ব্লগ তৈরি করতে পারেন। ব্লগার ডট কম বা ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম এর মতো বেশ কয়েকটি প্লাটফর্ম বিনা খরচে ব্লগ তৈরি করার এই সুবর্ণ সুযোগ দিয়ে থাকে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি টাকা দিয়ে ব্লগ তৈরি করেন।
➡️ট্রাফিকের সম্ভাব্য উৎস বের করা:
ট্রাফিক হলো আপনার ব্লগের দর্শক। আপনার ব্লগ তখনই অর্থ উপার্জন করবে যখন কেউ সেখানে থাকা কোনো বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে। দর্শকরাই হল সেই সোনার খনি যাদেরকে আপনি আপনার পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করতে যাচ্ছেন। আর ট্রাফিক আপনার ব্লগের প্রাণ অর্থাৎ উপার্জনের উৎস। ট্রাফিক ছাড়া ব্লগ থেকে ইনকাম আশা করা বোকামির কাজ।
গুগলের মতো কোনো সার্চ ইঞ্জিন থেকে ট্রাফিক পেলে এটিকে বলা হয় ‘অরগ্যানিক ট্রাফিক’। এটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়। আর আপনি যদি আপনার ব্লগে দর্শক আনতে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অর্থ প্রদান করে বিজ্ঞাপন পরিচালনা করেন তাহলে সেটি অর্থ প্রদত্ত ট্রাফিকের আওতায় আসে।
মান বজায় রেখে পর্যাপ্ত বিষয়বস্তুসমূহ সহ ব্লগ প্রস্তুত হয়ে গেলে আপনি মানি ব্লগিংয়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। ব্লগ থেকে টাকা আয়ের বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। তার মধ্যে কিছু মাধ্যম নিচে দেওয়া হলোঃ
➡️বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক:
ব্লগ থেকে অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক। এর জন্য প্রথমেই আপনাকপ একটি বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কে আপনার ব্লগ জমা দিতে হবে। যদি আপনার ব্লগ বিজ্ঞাপনের জন্য অনুমোদন পায় তাহলে আপনাকে বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে বিজ্ঞাপন কোডটি সংযুক্ত করতে হবে। ব্লগের মধ্যে সফলভাবে কোড সংযুক্ত করা হলে কন্টেন্টের বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে আপনার ব্লগ পোস্টে বিজ্ঞাপন চলে আসবে।
গুগল অ্যাডসেন্স বৃহত্তম বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক। তবে আপনি যদি নতুন ব্লগার হয়ে থাকেন তাহলে কমিশন জংশন, মনুমেট্রিক, ইনফোলিংকস, মিডিয়া ডট নেট, মিডিয়াভাইন, অ্যাডথ্রিভ, প্রোপেলার বা রেভেনিউ হিটস এর মতো অ্যাড নেটওয়ার্কও ব্যবহার করতে পারেন। এই সকল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্লগাররা হাজার হাজার টাকা ইনকাম করে।
➡️অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং:
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ক্রমাগত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আপনি একটি পণ্য নিয়ে লিখতে পারেন এবং সেই লেখার মধ্যে ওই পণ্যটি বিক্রয়ের লিঙ্ক সংযুক্ত করে দিতে পারেন। যদি দর্শকরা আপনার লেখাটি পড়ার সময় সেখানে সংযুক্ত করা লিঙ্কের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পণ্যটি ক্রয় করে তাহলে আপনি কিছু কমিশন পাবেন।
➡️বিজ্ঞাপনের জায়গা বিক্রয়:
আপনার ব্লগ যদি প্রতি মাসে পর্যাপ্ত ট্রাফিক এবং ভিউ পায় তাহলে আপনি বিজ্ঞাপনদাতাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য আপনার ব্লগের জায়গা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে।
ব্লগিং অনেকের কাছেই শখের বিষয়। আর আপনি যদি আপনার ব্লগিংয়ের শখকে পেশায় পরিণত করতে চান তাহলে মানি ব্লগিং শুরু করতে পারেন। ব্লগের মালিক হিসাবে আপনাকে একইসাথে সিইও, পরিচালক, এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্লগ থেকে স্থিতিশীল আয়ের জন্য আপনাকে উপরে উল্লেখিত সকল বিষয় যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। সামগ্রিকভাবে আপনার ব্লগকে দীর্ঘমেয়াদী আয়ের উৎস হিসাবে গড়ে তুলতে হলে এর বিষয়বস্তু বা কন্টেন্টের মান বাড়িয়ে তুলুন।